সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গৌতম বুদ্ধের অনুপ্রেরণার কাহিনী । জীবন বদলে দেবে এই কাহিনী

 

এক গরিব দুঃখী বেক্তির জীবন পরিবর্তনের কাহিনী।.

গৌতম বুদ্ধের অনুপ্রেরণার কাহিনী । জীবন বদলে দেবে এই কাহিনী


 আমরা জীবনে এই নিয়ে দুঃখিত থাকি যে  ইহার কারণ কি ?আমরা সবাই এটাই সবসময় মনে করে থাকি ,আমি  অন্যদের থেকে অনেক দুঃখিত ,অনেক কষ্ট করছি ,জীবনে কষ্ট সবচেয়ে বেশি আমার । অন্যরা আমার থেকে অনেক সুখে আছে ,শান্তিতে আছে , কিন্তু আমাদের এই চিন্তা ভুল । ভগবান আমাদের জন্মের সাথে সাথে জীবনে ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন সবকিছু দিয়ে দিয়েছেন । ভগবান গৌতম বুদ্বের এই গল্প থেকে বুজতে পারবো ।


গৌতম বুদ্ধ  একবার  তার শিষ্যদের সাথে একটি গ্রামে গিয়েছিলেন । সেই গ্রামের লোকেরা তাদের সমষ্যা নিয়ে গৌতম বুদ্ধের কাছে যেত এবং তাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফায়ার যেত । ওই গ্রামের রাস্তার ধরে একটি লোক বসে থাকতো এবং গৌতম বুদ্বের কাছে আসা প্রতিটি লোককে খুব মনোযোগ সহকারে  লক্ষ্য  করতো , সে এটা দেখে খুব অবাক হতো যে লোকতো  আসে অনেক মন খারাপ নিয়ে , কিন্তু যখন তারা গৌতম বুদ্ধের দর্শন করে ফিরত তারা অনেক খুশি থাকত , এবং মুখে থাকতো একটা হাসি । 

তাই গরিব ব্যক্তিটি মনে মনে ভাবলো যদি আমিও আমার সমস্যার কথা গৌতম বুদ্বের কাছে গিয়ে বলি তো কেমন হয় । তাই সে গৌতম বুদ্বের সাথে দেখা করতে চলে গেলো । গিয়ে দেখলো লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে এবং সভাই নিজের সমস্যার কথা বলছিলো এবং গৌতম বুদ্দ  হাসি মুখে তাদের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছিলেন ।

 দেখতে দেখতে ওই গরিব বেক্তিটির নম্বর এলো। সর্বপ্রথম ওই লোকটি গৌতম বুদ্দকে প্রণাম করে বললো , বাবা এই গ্রামে সবাই সুখী , একমাত্র আমিই গরিব এব দুঃখিত । তখন গৌতম বুদ্দ হেসে বললেন তুমি এই গ্রামে একমাত্র গরিব সেটার একমাত্র কারণ হলো, আজ পর্যন্ত তুমি কাউকে কিছু দাও নি । 

গৌতম বুদ্বের এই কথা শুনে লোকটি অনেক অভাক হয়ে গেলো এবং সে গৌতম বুদ্ধকে বললো , বাবা আমি গরিব অন্যকে দেয়ার মতো আমার কাছে কি আছে ? আমি নিজেই অনেক কষ্ট করে ভিক্ষা করে  দুবেলার দুমুটো অন্ন জোগাড় করি । 

গৌতম বুদ্ধ অনেক মনোযোগ সহকারে লোকটির কথা শুনছিলেন এবং বললেন ,সত্যিই তুমি একটা মূর্খ লোক । অন্যকে দেবার জন্য ঈশ্বর তুমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন , তোমার মুখের হাসি দিয়েছেন যা দিয়ে তুমি অন্যে লোকের  মধ্যে আশা জাগাতে পারো ,তোমাকে মুখ দিয়েছেন যা দিয়ে তুমি অন্য লোকের সাথে মিষ্টি কথা বলতে পারো ,অন্যের প্রশংসা করতে পারো ,ঈশ্বর  তোমাকে দুটি হাত দিয়েছেন যা দিয়ে তুমি অন্য লোকেকে সাহায্য করতে পারো । 

আর ঈশ্বর এই তিনটি জিনিস যাকে  দিয়েছেন সে কখনো গরিব হতে পারে না । গরিব তো মানুষ নিজের মন থেকে হয়ে থাকে । আর ইহা একটি ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছু না । আর এই ভুল ধারণা  আমাদের জীবন থেকে দূর করাই  আমাদের উদ্যেশ্যে হওয়া দরকার । .

গৌতম বুদ্দ লোকটিকে বললেন যদি তুমি তোমার মনে গরিব হওয়া ও টাকা না হওয়ার চিন্তা আসতে  দাও , তা হলে সেটা তোমার গরিব হওয়ার কারণ হবে। আর যদি এগুলো চিন্তা জীবন থেকে দূর করে দাও তাহলে তুমার একদিন গরিবী  একদিন অবশ্য দূর হয়ে যাবে । 

গৌতম বুদ্বের এই কথাটি শুনে ওই গরিব ব্যক্তিটির মনে হাসি ফুটে উঠে এবং ওই বেক্তিটি গৌতম বুদ্বের এই উপদেশ গুলি তার নিজের জীবনে পালন করে । যার কারণে সে আর কখনো দুঃখী হয় নি ।


জীবনে  শান্তি পাওয়ার উপায় 


মহাত্মা গৌতম বুদ্ধ  একটি নদীর তীরে একান্তে একটি ঝুপড়িতে বসবাস করতেন । গৌতম বুদ্ধ তার ঝুপড়ীর চারিপাশে সবুজ গাছ পালা লাগিয়ে রেখেছিলেন এবং তার লাগানো গাছ পালার মধ্যে অনেক পাখিরা বসবাস করতো । 

সকাল , বিকেল পাখির মধুর শব্দে গৌতম বুদ্ধকে সবসময় আনন্দিত করে রাখতো । এমন মনে হতো এই গাছ- পালা , পশু -পক্ষী , নদী সবই যেমন গৌতম বুদ্ধের পরিবার । গৌতম বুদ্ধ নিজের এই পরিবারের সাথে খুব আনন্দে থাকতেন । 

একদিন ভোরবেলা গৌতম বুদ্ধ দেখেন তার দরজার পাশে এক জমিদার দাঁড়িয়ে আছেন । জমিদার কে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছিলো । গৌতম বুদ্ধ জমিদার কে তার কাছে আসার কারণ এবং জমিদার কেন এতো চিন্তিত তার কারণ জানতে চাইলেন । 

জমিদার তখন গৌতম বুদ্ধ কে বলেন "বাবা" আমার টাকা -পয়সা ,, সম্পত্তি কোনো অভাব নেই, আমার একটি সুখী পরিবার আছে , আমার বা আমার পরিবারের কোনো রোগ নেই । তবুও আমি আমি রাত্রি বেলা ঘুমাতে পারি না । মনে সবসময় একটি অশান্তি বাস করছে , এমন কেন হয় , জমিদার গৌতম বুদ্ধের কাছে জানতে চাইলেন । 

গৌতম বুদ্ধ জমিদারের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেন । গৌতম বুদ্ধ জমিদার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, দেখো তুমার কাছে সবকিছু আছে ঠিক কিন্তু তোমার কাছে সেই জিনিস নেই , যে জিনিস তোমার নিদ্রার জন্য প্রয়োজন ।

তখন জমিদার গৌতম বুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেন সেটা কি জিনিস বাবা ? গৌতম বুদ্ধ বলেন তুমি চতুর্দিকে চিন্তার মধ্যে  ঘেরে আছো । ধন -সম্পত্তির  চিন্তা , ব্যবসার চিন্তা ,পরিবারের চিন্তা । শান্তি এবং চিন্তার মধ্যে সবসময় শত্রুতা থাকে । 

তখন জমিদার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি , তা গৌতম বুদ্ধের কাছে জানতে চাইলে, গৌতম বুদ্ধ জমিদার কে বলেন , তুমি প্রকৃতি থেকে থেকে শিক্ষা নাও , প্রকৃতি  তার গাছ- পালা, ফল-মূল , জল , বাতাস , আলো ,   আকাশ অনেক মূল্যবান সম্পদ চতুর্দিকে তার দুহাত দিয়ে ছড়িয়ে রেখেছে । 

গৌতম বুদ্ধ জমিদারকে বলেন। জমিদার তুমি যদি প্রকৃতি থেকে প্রেরণা নিয়ে প্রকৃতির মতো নিজের জীবন ঘঠন করো , তাহলে দেখবে তোমার জীবনের সব চিন্তা, সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং রাত্রি তে ভালোভাবে নিদ্রা ও হবে । 

জমিদার গৌতম বুদ্ধের কথা বুজতে পারেন , জমিদার লোক কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিলেন এবং শান্তিতে জীবন যাপন করতে শুরু করেন ।

গৌতম  বুদ্ধের এই গল্প থেকে একটি শিক্ষা পেলাম যে , জ্ঞান ও ধন যত তুমি দান  করবে তার থেকে অনেক বেশি ফিরিয়ে পাবে । ধন ও জ্ঞান দেন করলে কখনো কমে যায় না , একদিন তোমার দান করা ধন ও জ্ঞান  দ্বিগুন হয়ে তুমার কাছে এই ফিরে আসবে ।


রাজা জীবনে  শান্তি কি ভাবে  পেলেন |

এক রাজ্যে এক রাজা ছিলেন , তিনি সবসময় অশান্তিতে থাকতেন । অনেক চেষ্টা করেও তিনি শান্তি তে থাকতে পারতেন না । একদিন এক গরিব ভিক্ষুক তার প্রসাদে আসে , ভিক্ষুকের জ্ঞান কথা বার্তাতে রাজা অনেক সন্তুষ্ট হন । 

রাজা  ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করেন , আমি রাজা আমার কাছে সবকিছু আছে তবুও আমি মনে শান্তি পাচ্ছি না কেন । ভিক্ষুক বলে " রাজা আপনি একদিন একা বসে চিন্তা করুন ,আপনার অশান্তির কারণ আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন " এই বলে ভিক্ষু চলে গেল । তারপরদিন সকালে রাজা নিজের কক্ষে আসন করে বসে গেলেন । 

তখন রাজার মহলের এক কর্মচারী রাজার কক্ষ পরিষ্কার করতে আসে , রাজা সেই কর্মচারীকে তার কষ্টের কথা জিজ্ঞাসা করেন , কর্মচারীর কষ্টের কথা শুনে রাজা অনেক দুঃখিত হয়ে পরেন । তারপর তিনি তার মহলের প্রত্যেক কর্মচারীর কষ্টের কথা জিজ্ঞাসা করতে শুরু করেন । 

রাজা বুজতে পারেন যে তার কর্মচারীরা বেতন কম থাকার কারণে জীবনে কষ্ট পাচ্ছে । তাই রাজা তার কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দিলেন , বেতন বাড়ানোর জন্য রাজার কর্মচারীরা খুশি হয়ে রাজাকে ধন্যবাদ জানালেন এবং রাজার জয়ধ্বনি দিলেন । 

কর্মচারীদের খুশি দেখে রাজার মন ও সন্তুষ্ট ও খুশিতে ভরে যায় । তারপরদিন সেই ভিক্ষুক আবার রাজার কাছে আসে এবং রাজা কে জিজ্ঞাসা করে ," রাজা আপনি শান্তি পেয়েছেন " রাজা বলেন " পুরোপুরি তো শান্তি পাই নি কিন্তু যবে থেকে আমি মানুষের দুঃখ কষ্টের কারণ জানতে পেরেছি তখন থেকে আমার মন থেকে অশান্তি ধীরে ধীরে কম হচ্ছে "। 

তখন ভিক্ষুক রাজাকে বলে " রাজা আপনি শান্তির পথ পেয়ে  গেছেন, এখন কেবল এই পথ ধরে আপনাকে এগোতে হবে , একজন রাজা তখনি সন্তুষ্টি থাকে যখন তার রাজ্যে প্রজারা খুশি থাকে "। 

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা  পেলাম  , আমাদের মনের শান্তির জন্য নিজেকে খুশি করার চেয়ে , অন্যের দুঃখ কষ্ট দূর করে অন্যকে খুশি করলে নিজের জীবনে শান্তি ও খুশি পাওয়া যায় ।  




মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রেরণার গল্প , কৃষকের অলস তিন ছেলে |Motivational Story in Bengali ,Farmer's lazy three sons

একটি গ্রামে এক কৃষক ছিল । সে মধ্যবিত্ত ছিল ,মধ্যবিত্তি হলেও সে অনেক প্ররিশ্রমী ছিল । সে প্ররিশ্রম করতে ভালোবাস্তো ।ঘরে বসে থাকতে চাইতো না । অলসভাবে বসে থাকতে সে ঘৃণা করতো । কৃষকের স্ত্রী - সেও খুব পরিশ্রমী । দিনরাত স্বামীর সংগে সে পরিশ্রম করে । এমন করে দিন যায় । কৃষকের তিন পুত্র । কিন্তু তিনটি পুত্র হলো খুব অলস । খায় - দায় ,গল্প করে ,গান গায় ঘুরে বেড়ায় - কারও কাজে মন নেই এতটুকু । কৃষক তাদের কাজ শেখালো । কি করে মাটি কুপাতে হয় ,মোই দিতে দিতে হয় , চাষ করতে হয় , বীজ বুনতে হয় ,সব শিখলো তারা । কিন্তু কেউ কাজ করতো না । তারা জানতো সব, কিন্তু করতো না কিছু । গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াতে তারা খুব ভালোবাসে । একদিন কৃষক গিন্নি কৃষকে বললো - শুনছ  গো ?- কি বলছো ? দেখছো ছেলেদের কান্ড ? হ্যাঁ ।  ছেলেরা ওরকম কুরে হলে তো দুদিনে বসে খেয়ে সব উড়িয়ে দেবে । তারপর কি হবে ? কৃষক চুপ করে রইলো । কিছুক্ষণ পরে শুধু একটু হেসে বললো - ঠিক সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে । এমন হবে দিন যায় । কৃষক গিন্নি স্বামীর কোথায় চুপ করে থাকে ।  দেখতে দেখতে কৃষক বৃদ্ধ হয়ে পড়লো । তখন সে একদিন স্ত্রীকে ডেকে বললো -...

অনুপ্রেরণামূলক গল্প গৌতম বুদ্ধ Inspirational Story Gautam Buddha

একবার গৌতম বুদ্ধ ,বুদ্ধ ধর্মের শিক্ষা প্রচারের জন্য গ্রাম গ্রাম শহর শহর নিজের শিষ্য দেড় নিয়ে ঘুরছিলেন ,পুরোদিন ঘুরতে ঘুরতে গৌতম বুদ্ধের জল পিপাসা পেয়ে গেলো ,জল পিপাসা এতই বেড়ে গেলো যে তিনি আর সহ্য করতে পড়তে ছিলেন না । তাই তিনি তার একজন শিষ্য কে ডেকে বললেন যে তার অনেক পিপাসা পেয়েছে তাই তার জন্য জল আনার জন্য । শিষ্য গুরুর আদেশে জল আনার জন্য গ্রামের ভিতরে গেলো ,গ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি নদী বইছিল । কিন্তু সেই নদীতে গ্রামের সবাই কাপড় ধুইছিলো ,কেউ গরু ,মহিষ কে স্নান করাচ্ছিল ,তাই নদীর জল অপরিস্খার ছিল ,তাই শিষ্য চিন্তা করলো এই জল তো অপররিস্খার তার গুরুদেবের জন্য এই  অপরিস্খার জল নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না ,তাই শিষ্য জল না নিয়ে খালি হাতে চলে গেলো ,গৌতম বুদ্ধা যখন শিষ্য কে খালি হাথে চলে আসতে দেখেন তখন খালি হাতে আসার কারণ জিগ্গেস করেন ,তখন শিষ্য পুরো কাহিনী বলেন ।  এইদিকে গুরুদেবের পিপাসাতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ,গৌতম বুদ্ধা তখন আরেকজন শিষ্যকে জল আনার জন্য বলেন তখন সেই শিষ্য একটি   মাটির পাত্রতে পরিস্খার জল নিয়ে আসে ,তা দেখে গৌতম বুদ্ধা অভাক হয়ে গেলেন এবং এব...